প্রশ্ন : আমি কাউকে ভোট দেওয়ার পর তিনি যদি নির্বাচিত হয়ে অন্যায়, খুন, দূর্নীতি ইত্যাদি করেন, তবে তার দায় কি আমার ওপর বর্তাবে?
উত্তর : ভোটদানের মধ্যে নিম্নোক্ত তিনটি বিষয় পাওয়া যায়—
১. ভোট দেওয়া এক প্রকারের সাক্ষ্য। কাউকে ভোট দেওয়ার অর্থ হলো এ সাক্ষ্য দেওয়া যে, সে সৎ, যোগ্য এবং দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণকর। আর সাক্ষ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে সত্য ও ন্যায়সংগত সাক্ষ্য দেওয়া জরুরি। আল্লাহ তাআলা বলেন,
يَأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُونُوا قَوَّامِينَ لِلَّهِ شُهَدَاءَ بِالْقِسْطِ .
অর্থ : হে ইমানদারগণ, তোমরা হয়ে যাও আল্লাহর বিধানাবলি পালনের জন্য সদাপ্রস্তুত এবং ন্যায়সংগত সাক্ষ্য প্রদানকারী।
[সুরা মায়িদা: ০৮]
মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া বৈধ নয়। মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়ার ব্যাপারে কঠিন সতর্কবাণী উচ্চারিত হয়েছে। আনাস ইবনে মালেক রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কবিরা গুনাহ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন,
الإشْرَاكُ بِاللهِ، وَعُقُوْقُ الْوَالِدَيْنِ، وَقَتْلُ النَّفْسِ، وَشَهَادَةُ الزُّوْرِ.
অর্থ : (কবিরা গুনাহ হলো) আল্লাহর সঙ্গে শরিক করা, পিতামাতার অবাধ্যতা করা, মানুষ হত্যা করা এবং মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া।
[সহিহ বুখারি, ২৬৫৩]
২. ভোট দেওয়া এক ধরনের সুপারিশও বটে। কাউকে ভোট দেওয়ার অর্থ হলো তাকে জনপ্রতিনিধি বানানোর সুপারিশ করা। আর সুপারিশ ভালো কাজের করতে হয়। মন্দ কাজের সুপারিশ করা বৈধ নয়। আল্লাহ তাআলা বলেন,
مَنۡ یَّشۡفَعۡ شَفَاعَۃً حَسَنَۃً یَّکُنۡ لَّهٗ نَصِیۡبٌ مِّنۡهَا وَ مَنۡ یَّشۡفَعۡ شَفَاعَۃً سَیِّئَۃً یَّکُنۡ لَّهٗ کِفۡلٌ مِّنۡهَا
অর্থ : যে ভাল সুপারিশ করবে, তা থেকে তার জন্য একটি অংশ থাকবে। আর যে মন্দ সুপারিশ করবে তার জন্যও তা থেকে একটি অংশ থাকবে।
[সুরা নিসা : ৮৫]
৩. ভোট দেওয়ার মাধ্যমে প্রার্থীকে নিজের প্রতিনিধি হিসেবে বাছাই করে নেওয়া হয়। আর প্রতিনিধির কাজের ব্যাপারে শরয়ি মূলনীতি হলো
تَصَرُّفُ الْوَكِيْلِ كَتَصَرُّفِ الْمُوَكِّلِ.
অর্থ : প্রতিনিধির কাজ প্রতিনিধিত্ব দানকারীর কাজের মতোই বিবেচিত হয়।
এ সব কারণে ভোট দেওয়ার আগে অবশ্যই যাচাই-বাছাই ও চিন্তাভাবনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। ভোট দিতে হবে এমন ব্যক্তিকে, যে সৎ, নীতিবান এবং দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণকর। অসৎ, দুর্নীতিবাজ ও আল্লাহদ্রোহী প্রকৃতির লোককে ভোট দেওয়া যাবে না। এমন লোকদেরকে ভোট দেওয়া মিথ্যা সাক্ষ্যদান, মন্দ সুপারিশ ও ভুল ব্যক্তিকে নিজের প্রতিনিধি নির্বাচন করার নামান্তর।
অতএব, অসৎ, দুর্নীতিবাজ ও আল্লাহদ্রোহী প্রকৃতির ব্যক্তিকে ভোট দেওয়া জায়েজ হবে না। যদি কোনো প্রার্থীর ব্যাপারে জানা থাকে যে, সে নির্বাচিত হয়ে খুন, দুর্নীতি, আল্লাহদ্রোহিতা, রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুণ্ঠন ইত্যাদি অপকর্ম করবে এবং এটা জেনেও কেউ তাকে ভোট দেয়, তবে উক্ত প্রার্থীর কৃত অপকর্মের গুনাহের একটা অংশও তার আমলনামায়ও যোগ হবে।
অবশ্য কেউ যদি প্রার্থীর ব্যাপারে এমন কিছু না জানে, বরং সে সৎ ও নীতিবান মনে করেই তাকে ভোট দেয়, আর নির্বাচিত হওয়ার পর ওই ব্যক্তি খুন, দুর্নীতি, আল্লাহদ্রোহিতা, রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুণ্ঠন ইত্যাদি অপকর্মে জড়িত হয়, তবে এর দায় ভোটদাতার ওপর বর্তাবে না, বরং ঐ নির্বাচিত ব্যক্তির ওপরই বর্তাবে।
আরও দ্রষ্টব্য, সুরা মায়িদা, ২; সুনানু ইবনি মাজাহ, ২০৪৩; বাদায়িউস সানায়ি, ২/২৩১; আল-মাউসুআতুল ফিকহিয়্যাতুল কুয়েতিয়্যা, ২৬/১৩২
১২০ টি প্রশ্ন আছে
৬০ টি প্রশ্ন আছে
১২১ টি প্রশ্ন আছে
২০২ টি প্রশ্ন আছে
২১ টি প্রশ্ন আছে
৭৯ টি প্রশ্ন আছে
২৮ টি প্রশ্ন আছে
৫৬ টি প্রশ্ন আছে
৫১ টি প্রশ্ন আছে
১৩১ টি প্রশ্ন আছে
১৮৫ টি প্রশ্ন আছে
৭৭ টি প্রশ্ন আছে